How to Earn Money as a Student — পড়াশোনার পাশাপাশি আয় বাড়ানোর সেরা ৪ টি স্কিল

 




শুধু অভ্যাস নয়, ছাত্রজীবনের এই ৪টি কৌশল বদলে দেবে আপনার আয়ের পথ

ভূমিকা

ছাত্রজীবনে আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছা আমাদের সবার মধ্যেই থাকে। নিজের খরচ চালানো, পরিবারকে সাহায্য করা বা শখের জিনিসটা নিজের টাকায় কেনার আনন্দটাই অন্যরকম। আমরা অনেকেই পার্ট-টাইম জবের গতানুগতিক ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত। কিন্তু এমন কিছু অসাধারণ এবং কার্যকরী উপায় আছে, যা আপনার ভাবনার জগতকেই বদলে দেবে। এই পোস্টে আমরা এমন কিছু আশ্চর্যজনক কৌশল নিয়ে আলোচনা করব, যা কাজে লাগিয়ে আপনি আজ থেকেই আয় করা শুরু করতে পারেন, প্রায়শই আপনার ইতিমধ্যে থাকা দক্ষতা বা অভ্যাস ব্যবহার করে।

--------------------------------------------------------------------------------

১. আপনার 'খারাপ অভ্যাস'-কে সম্পদে পরিণত করুন

ভাবতে অবাক লাগলেও, আপনার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানোর "খারাপ অভ্যাসটিই" হতে পারে আপনার আয়ের অন্যতম উৎস। শুনতে অদ্ভুত লাগছে? চলুন অ্যান্ড্রু কিরবির গল্পটা শোনা যাক।

অ্যান্ড্রু প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাতেন। কিন্তু এই সময়টা তাকে অজান্তেই তার পছন্দের বিষয়গুলোতে একজন বিশেষজ্ঞ করে তুলেছিল। যখন তিনি এই বিষয়টি বুঝতে পারলেন, তখন তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। তিনি কোনো জটিল পথে না গিয়ে একটি সহজ কৌশল বেছে নেন: সফল ব্যক্তিদের অনুকরণ করা। তিনি জেফ বেজোসের মর্নিং রুটিন বা মার্কাস অরেলিয়াসের নাইট রুটিন নিজের জীবনে প্রয়োগ করতেন এবং এর উপর ভিত্তি করে নিজের সৎ রিভিউ দিয়ে ভিডিও তৈরি করতেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই সাধারণ কৌশলটি ব্যবহার করে তিনি মাত্র তিন বছরে, ২২ বছর বয়সেই এক মিলিয়ন ডলার আয় করেন।

এর মূল শিক্ষা হলো, আপনি কন্টেন্ট দেখতে যে সময় ব্যয় করছেন, সেই সময়টাকেই কৌশলগতভাবে নিজের দক্ষতা তৈরিতে কাজে লাগাতে পারেন এবং পরে সেই দক্ষতাকে আয়ের উৎসে পরিণত করতে পারেন।

আমি যেটা করতাম প্রথমে একটি বিষয় শিখতাম সেটা নিজের উপর এপ্লাই করতাম এবং তার ভালোমন্দ প্রোস এন্ড কন্স অন্যদের শেখাতাম।

২. পর্দার আড়ালের কাজগুলো থেকে আয় করুন

বর্তমানে অনলাইন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সংখ্যা মাশরুমের মতো বাড়ছে। এর ফলে পর্দার আড়ালের কিছু কাজের চাহিদাও বেড়েছে আকাশছোঁয়া পরিমাণে। কন্টেন্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং এবং গ্রাফিক ডিজাইন (বিশেষ করে থাম্বনেইল তৈরি)-এর মতো কাজগুলোর চাহিদা এখন তুঙ্গে।

এই জগতে প্রবেশ করার কৌশলটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই এক:

  • ইউটিউব থেকে বিনামূল্যে কাজটি শিখুন।
  • আপওয়ার্ক (Upwork) বা ফাইভার (Fiverr)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অথবা সরাসরি ইউটিউবে ক্রিয়েটরদের খুঁজুন।
  • শুরুতে বিনামূল্যে কাজ করার প্রস্তাব দিন। এর মাধ্যমে আপনি নিজের কাজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারবেন এবং ক্লায়েন্টকে আপনার দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারবেন।
  • মনে রাখবেন, ভালো কাজ করলে ক্লায়েন্ট নিজেই আপনাকে পারিশ্রমিক দেবে এবং অন্যদের কাছে আপনার নাম সুপারিশ করবে।

এই কাজগুলোতে আয়ের সম্ভাবনা অকল্পনীয়। যেমন, ধ্রুব রাঠির (Dhruv Rathee) কন্টেন্ট রাইটার একটি স্ক্রিপ্ট লিখে যা আয় করেন, তা দিয়ে তিন-চারটি আইফোন কেনা সম্ভব। ভিডিও এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে, প্রিমিয়ার প্রো (Premier Pro)-এর মতো সফটওয়্যার আয়ত্তে আনতে পারলে আপনি প্রতি মিনিটের জন্য ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। আর একটি ভালো থাম্বনেইলের জন্য ছোট ক্রিয়েটররাও ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউটিউবার মিস্টার বিস্ট (MrBeast) তো তার একটি মাত্র থাম্বনেইলের জন্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন।

যদি তুমি একটা জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করো তবে সেটা কপি হবে কিন্তু যদি তুমি অসংখ্য জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করো তবে সেটা রিসার্চ হবে।

সত্যি বলতে, এই ক্ষেত্রগুলোতে ভালো মানুষের চাহিদা এতটাই বেশি যে, আমার নিজের বিজনেসের ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় স্ক্রিপ্ট লেখা বা এডিটিংয়ের জন্য লোক খুঁজতে হয়। তাই, আপনি যদি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তবে কাজের অভাব হবে না।

৩. প্রত্যাখ্যাত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

ছাত্রজীবনে আয়ের একটি অন্যতম সেরা উপায় হলো টিউশনি। আপনি যেকোনো বিষয়েই দক্ষ হতে পারেন, হোক তা গণিত, ইংরেজি, আইসিটি কিংবা বাংলা ব্যাকরণ। নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই বাংলা ব্যাকরণের নাম শুনলে ভয় পায়, যা আপনার জন্য একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে। কিন্তু ছাত্র খুঁজে পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি অভিনব মানসিক কৌশল হলো "প্রত্যাখ্যাত হওয়ার লক্ষ্য" নির্ধারণ করা।

কৌশলটি হলো, "আমি এই মাসে ১০ জন ছাত্রকে পড়ানোর জন্য রাজি করাবো" - এমন লক্ষ্য নির্ধারণ না করে, লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, "আমি এই মাসে ১০০ জনের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবো"। যখন আপনার লক্ষ্যই থাকবে রিজেক্ট হওয়া, তখন 'না' শোনার ভয় আপনার মন থেকে পুরোপুরি চলে যাবে। আর ১০০ জনের কাছে পৌঁছাতে পারলে সাফল্য পাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।

এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনি কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারেন। যেমন, নিজের যোগ্যতার কথা উল্লেখ করে ছোট ছোট টেমপ্লেট ছাপিয়ে বিলি করতে পারেন অথবা আপনার এলাকার স্কুলগুলোতে কোনো অনুষ্ঠান বা অভিভাবক সমাবেশে গিয়ে সরাসরি অভিভাবকদের সাথে কথা বলতে পারেন।

এই পথের অনুপ্রেরণা হিসেবে একটি ব্যক্তিগত গল্প বলা যায়। বক্তার জীবনের প্রথম আয় এসেছিল এই টিউশনি থেকেই। সেই টাকা দিয়ে তিনি তার মায়ের জন্য একজোড়া জুতো কিনেছিলেন। সেই প্রথম আয়ের টাকায় মায়ের মুখের হাসি দেখার মুহূর্তটিই ছিল তার কাছে জীবনের আসল সাফল্য।

৪. ইউটিউব থেকে শিখে ৫৫০ কোটি টাকার মালিক

প্রথাগত ডিগ্রিই যে বিশাল সাফল্যের একমাত্র পথ নয়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আসামের কৃষান ভাগারিয়া। এই গল্পটি প্রমাণ করে যে, আজকের ডিজিটাল যুগে অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

কৃষান দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল ছেড়ে দেন এবং ইউটিউব থেকে কোডিং শেখা শুরু করেন। আসামের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো প্রথাগত মেন্টর না থাকায় ইউটিউবই ছিল তার একমাত্র শিক্ষক। তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চেষ্টার পর তিনি 'ট্যাক্সিস' (Taxis) নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন। অবিশ্বাস্যভাবে, ওয়ার্ডপ্রেসের (WordPress) প্রতিষ্ঠাতা তার এই অ্যাপটি ৫০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা) কিনে নেন।

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, একাগ্রতা এবং ইউটিউবের মতো বিনামূল্যের রিসোর্স থাকলে ভৌগোলিক অবস্থান বা প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির অভাব কোনো বাধাই নয়। বর্তমানের অনেক আধুনিক কোম্পানি আপনার ডিগ্রির চেয়ে আপনার সম্পন্ন করা প্রজেক্টকে বেশি মূল্য দেয়।

উপসংহার

এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, আয়ের সুযোগ আমাদের চারপাশে, এমনকি সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত জায়গাগুলোতেও লুকিয়ে আছে। প্রয়োজন শুধু শেখার ইচ্ছা, গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করার মানসিকতা এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানো সময় থেকে শুরু করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়কে শক্তিতে পরিণত করা—প্রতিটি পথই আপনার জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।

শেষ করার আগে একটি কথা মনে রাখবেন:

অলসরাই আফসোস করে মরে পরিশ্রমীরা ইতিহাস গড়ে।



How to Earn Money as a Student — পড়াশোনার পাশাপাশি আয় বাড়ানোর সেরা  ৪ টি স্কিল






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url