Bangladesh Education System: The Harsh Reality Nobody Talks About

 

Bangladesh Education System: The Harsh Reality Nobody Talks About

স্কুল আপনাকে যা শেখায়নি: শিক্ষা ব্যবস্থার পেছনের ৫টি অন্ধকার বাস্তবতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস। প্রফেসর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কেন লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হতে এসেছ?” উত্তরে কেউ বলল জ্ঞানী হতে, কেউ বলল প্রতিষ্ঠিত হতে। কিন্তু একজন ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দিল, “স্যার, আমি এখানে এসেছি টাকা ইনকাম করার জন্য।” তার কথা শুনে পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল।

ছেলেটি ব্যাখ্যা করল, “আমরা লেখাপড়া করি ডিগ্রির জন্য। ডিগ্রি নিই চাকরির জন্য। আর চাকরি করি টাকা ইনকামের জন্য। তাহলে লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য যদি টাকাই হয়, তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সরাসরি টাকা আয় করা শেখায় না কেন?”

এই একটি প্রশ্নই আমাদের সিস্টেমের ভেতরের অন্তঃসারশূন্যতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এই হতাশা থেকেই আজ শিক্ষার্থীরা নিজেদের সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলছে, আর ২০২২ সালেই প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার পথ। আমাদের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথাতেও এই সিস্টেমের অসারতার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। প্রশ্নটা হলো, এই ব্যবস্থাটি কি আসলেই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য তৈরি, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো উদ্দেশ্য?

চলুন, এই ব্যবস্থার পেছনের পাঁচটি তেতো সত্য উন্মোচন করা যাক, যা আপনাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

১. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল চিন্তাবিদ নয়, অনুগত সৈনিক তৈরির জন্য

আজকের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার শেকড় লুকিয়ে আছে ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এক যুদ্ধের ইতিহাসে। ১৮০৬ সালে Prussia (তৎকালীন জার্মানির একটি রাজ্য) নেপোলিয়নের আর্মির কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। Prussia-র নেতারা দেখলেন, তাদের সৈন্যরা যুদ্ধের ময়দানে উপরওয়ালার আদেশ মানার বদলে “নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার করছিল”। এই উপলব্ধি থেকে তারা বুঝলেন, একটি অনুগত প্রজন্ম তৈরি করতে না পারলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ তাদের শাসন নিয়েই প্রশ্ন তুলবে।

এর সমাধান হিসেবে তারা “Prussian Education System” নামে ৮ বছরের একটি বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন চিন্তাকে দমন করা এবং এমন এক প্রজন্ম তৈরি করা যারা প্রশ্ন না করে কেবল আদেশ পালন করবে। অর্থাৎ, এমন একদল বুদ্ধিহীন, অনুগত সৈনিক তৈরি করা, যারা কেবল হুকুম তামিল করতে জানে। এই নকশাটি এতটাই সফল হয়েছিল যে এর ভূত আজও আমাদের ক্লাসরুমগুলোতে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে প্রশ্ন করার চেয়ে শিক্ষকের কথা মেনে নেওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

২. শিল্পপতি আর ঔপনিবেশিক শাসকেরা এই ব্যবস্থা লুফে নিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের জন্য

শিল্পবিপ্লবের সময় Prussia-র এই আনুগত্যের মডেলটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার মালিকদের এমন কর্মী বাহিনী দরকার ছিল, যারা উদ্যোক্তা বা স্বাধীন চিন্তাবিদ হবে না, বরং ১২ ঘণ্টা ধরে কারখানায় মুখ বুজে কাজ করবে। তাদের দরকার ছিল শ্রমিক, চিন্তাবিদ নয়।

পৃথিবীর প্রথম বিলিয়নেয়ার জন ডি. রকফেলার এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন, কারণ তার তেল কোম্পানির জন্য প্রচুর অনুগত শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। তিনি সোজাসাপ্টা বলেছিলেন:

আমার চিন্তাবিদের জাতি চাই না, আমার শ্রমিকের জাতি চাই।

এই একই মডেল ব্যবহার করে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে তাদের শাসন টিকিয়ে রাখে। লর্ড ম্যাকলে এমন এক ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি শ্রেণি তৈরি করা, যারা রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও চিন্তা, রুচি ও নৈতিকতায় হবে ইংরেজ। এতে তাদের শাসন করা সহজ হবে। লর্ড ম্যাকলের ভাষায়:

...এমন এক শ্রেণি তৈরি করা, যারা রক্তে ও বর্ণে ভারতীয়, কিন্তু রুচি, মতামত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিতে ইংরেজ।

শাসক আর শিল্পপতিদের তৈরি করা এই আনুগত্যের কারখানাকে চালু রাখতে প্রয়োজন ছিল একটি জ্বালানির। আর সেই জ্বালানিটি হলো ভয়।

৩. এই ব্যবস্থা আনন্দের মাধ্যমে নয়, ভয়ের মাধ্যমে শেখায়

এই সিস্টেম আনন্দ দিয়ে শেখায় না, বরং পরীক্ষা আর ফেল করার ভয় দেখিয়ে শাসন করে। একজন ছাত্র যখন জানে তার সামনে এক মাসে দশটি বই শেষ করার পরীক্ষা, তখন সে বুঝে পড়ার চেয়ে মুখস্থ করে পাস করার কথাই ভাবে। এভাবেই আমাদের শিক্ষাজীবনের শুরুটা হয় ভয় থেকে, কোনো শখ বা আনন্দ থেকে নয়।

অন্যদিকে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাকে আনন্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।

  • নেদারল্যান্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেওয়া হয় না এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বড় কোনো পরীক্ষাও নেওয়া হয় না।
  • ফিনল্যান্ডে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক ব্যবসার জ্ঞান দেওয়া হয় এবং তাদের প্রথম বাধ্যতামূলক পরীক্ষা দিতে হয় ১৬ বছর বয়সে।

এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের সাকিব আল হাসানের মেয়ের ঘটনা। বাংলাদেশে থাকার সময় তার মেয়ে স্কুলে যাওয়ার আগে প্রতিদিন কান্না করত। অথচ আমেরিকায় যাওয়ার পর তাকে ঘুম থেকে ডাকার আগেই সে নিজে নিজে উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে যেত। একটি ছোট শিশুর এই প্রতিক্রিয়াটিই দুই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আকাশ-পাতাল পার্থক্য পরিষ্কার করে দেয়।

৪. সফলতা মানে চাকরি, দক্ষতা বা উদ্যোক্তা হওয়া নয়

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ এমন এক মানসিকতা তৈরি করেছে যেখানে সফলতার একমাত্র মাপকাঠি হলো একটি “চাকরি”। এখানে দক্ষতা অর্জন বা উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো মূল্য নেই।

সমাজ বাস্তবতার একটি চিত্র দেখুন: যে ছেলেটি ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ১৫ হাজার টাকার একটি সরকারি চাকরি পায়, তাকে “সফল” বলা হয়। আর যে ছেলেটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে, তাকে “ব্যর্থ” হিসেবে দেখা হয়। আমাদের সমাজ সফলতার এই অদ্ভুত সংজ্ঞা কোথা থেকে পেলো? যেন চাকরির বাইরে পৃথিবীতে সফল হওয়ার আর কোনো পথই খোলা নেই।

অথচ বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ বা স্টিভ জবসের মতো সফল ব্যক্তিরা কলেজ ড্রপআউট ছিলেন। তারা প্রমাণ করেছেন যে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিই সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি নয়।

৫. আমরা মুখস্থ করি, আর অন্যেরা ভবিষ্যৎ তৈরি করে

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মুখস্থবিদ্যার ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে এটি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী বা প্রায়োগিক দক্ষতা তৈরিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এর ফলেই তৈরি হচ্ছে ‘I am GPA 5’ জেনারেশন, যারা পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা মুখস্থ করে পরীক্ষায় প্রথম হয়, কিন্তু সেই সেতু তৈরির দক্ষতা তাদের নেই।

উদাহরণটি পরিষ্কার—অন্য দেশের ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের দেশে এসে সেতু নির্মাণ করে, আর আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা চাকরির পরীক্ষার জন্য সেই সেতুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর পিলারের সংখ্যা মুখস্থ করতে ব্যস্ত থাকে। এর ফলে আমরা এমন এক প্রজন্ম তৈরি করছি, যারা অন্যের তৈরি করা জিনিস নিয়ে পরীক্ষা পাস করতে পারদর্শী, কিন্তু নিজেরা কিছু তৈরি করতে অক্ষম।

শেষ কথা: এই ফাঁদ থেকে মুক্তির উপায় কী?

এটা স্পষ্ট যে, আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাটি একটি সেকেলে ফাঁদ, যা ঔপনিবেশিক শাসক আর শিল্পপতিদের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল নিয়ন্ত্রণ ও আনুগত্য, সৃজনশীলতা বা মুক্তি নয়। এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের গোড়াতে হাত দিতে হবে। এর প্রতিষেধক হলো সমালোচনামূলক চিন্তাকে উৎসাহিত করা, ডিগ্রির চেয়ে দক্ষতাকে বেশি মূল্য দেওয়া এবং সফলতার সংজ্ঞা আমাদের নিজেদের শর্তে নতুন করে লেখা।

এখন যেহেতু আমরা এই সিস্টেমের পেছনের সত্যটা জানি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা কীভাবে তৈরি করতে পারি যা তাদের আটকে না রেখে সত্যিকারের মুক্তি দেবে?



Bangladesh Education System: The Harsh Reality Nobody Talks About







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url